নিখোঁজের দুদিন পর নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানের মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া গেছে। অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানের মৃত্যুর খবরে পরিবার ও ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানের মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবী করেছেন তাঁর সহকর্মীরা। এ ঘটনায় সর্বত্র আলোচনা চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়- গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) অনার্সের ১ম বর্ষে ভর্তি ফি অতিরিক্ত আদায়সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানকে দেড় ঘন্টা কার্যালয়ে তালা দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও শিক্ষকরা তালা খুলে অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানকে মুক্ত করেন। এসময় রবিবার অভিযোগের বিষয়ে ছাত্র শিক্ষক বৈঠকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দিয়ে কলেজ ত্যাগ করেন অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমান। শুক্রবার সকালে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের বাসা থেকে ব্রাহ্মবাড়িয়া বোনের বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বের হন নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমান। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
এদিকে রবিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কলেজ প্রাঙ্গণে কর্মসূচি পালন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, রবিবার অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তির ফি নিয়ে পূর্বনিধারিত ছাত্র শিক্ষক বৈঠক হবার কথা ছিল। কিন্তু অধ্যক্ষ আজ কলেজে আসেন নি। এ খবর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবীতে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে। কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে অধ্যক্ষ না আসার কারণ ও অনার্স ১ম বর্ষের ভর্তি ফি কমানোর বিষয়ে জানতে চান। শিক্ষকরা অধ্যক্ষকের অনুপস্থিতিতে কোন সিদ্ধান্ত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে শিক্ষকদের তালাবদ্ধ করে রাখে। প্রায় ১ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর উপস্থিত শিক্ষকরা অধ্যক্ষের পরিবারের বরাত দিয়ে শিক্ষার্থীদের জানান, অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানের দু’দিন ধরে কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছেনা। পরে শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানের নিখোঁজের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত আবেদন করেন নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আমির হোসেন।
রবিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানের স্ত্রী সৈয়দা সুলতানা আক্তার স্বামী মোঃ ফজলুর রহমান নিখোঁজের বিষয়টি উল্লেখ করে নবীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। সাধারণ ডায়েরীতে তিনি উল্লেখ করেন- শুক্রবার সকাল ৮টায় নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডের বাসা থেকে ব্রাহ্মবাড়িয়া বোনের বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমান। এরপর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলনা। অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাধারণ ডায়েরী দায়েরের পর নবীগঞ্জ থানা থেকে দেশের সকল থানায় বার্তা পাঠানো হয়। সাধারণ ডায়েরীর কয়েক ঘন্টার মাথায় গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল খালেক জানান, অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাওয়া গেছে। এসআই আরও জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে জহির নামে জনৈক ব্যক্তি ফজলুর রহমানকে অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করেন। এরপর তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থান রবিবার সকাল ৭টায় মারা যান।
অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের মৃত্যুর খবর নবীগঞ্জ পৌছুলে পরিবার ও ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বমহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের সদস্যদের আহাজারীতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে উঠে।
অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের মৃত্যুর কারন জানা যায়নি। তাঁর মৃত্যু নিয়ে ধ্রুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। কারো কারো ধারণা হয়তো গাড়িতে মলম পার্টি বা ছিনতাইকারী চক্র নেশা জাতীয় কোন কিছু দিয়ে তাকে অজ্ঞান করে সব কিছু লুট করে নিয়ে যায়। কারো মতে অধিক টেনশনের কারণে স্টোক করেছেন। তবে ময়নাতদন্তের সঠিক রিপোর্ট পেলেই অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের মৃত্যুর মূল কারণ জানা যাবে। অধ্যক্ষ মোঃ ফজলুর রহমানের মৃত্যুর বিষয়টিকে রহস্যজনক উল্লেখ করে এর সঠিক কারণ নির্ণয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবী করেছেন তাঁর সহকর্মীরা।
উল্লেখ, গত ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে নবীগঞ্জ সরকারী কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন ফজলুর রহমান।
নবীগঞ্জ সরকারি কলেজ এর অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ কামাল হোসেন বলেন কি কারণে মৃত্যু হয়েছে এর সঠিক কারণ জানা যায়নি।